জীবন গিয়েছে চলে আমাদের, কুড়ি,কুড়ি,বছরের পার-
তখন হঠাৎযদি মেঠো পথে,পাই আমি তোমারে আবার ।
(জীবনানন্দ দাশ)
শাহ জাহান আহমেদ (মাল্টা থেকে)ঃ-আমার বন্ধুদের মধ্যে আজিম ছিল ব্যতিক্রম।ফেসবুক চালায় না ভাল,না হলে সমস্যা ছিল আমার। আরেক বন্ধু ছিল বাদলখুবই ঘনিষ্ট বন্ধু।
বাদল বর্তমানে কাতারে আছে একটি কোম্পানীর উচচ পদে এবং খুব ভাল বেতনে। বাদলের কাছ থেকে অনেক বিষয়ে জানতাম ,কারন ঐ সময় আমাদের তো আর সুনামগঞ্জের বাহিরে যাওয়া হতনা। ভৈরব থেকে আসলে শুরু হত বেড়ানোর পালা,অবশ্য বেশী দুরনা শাহ আরপিন মোকাম,ডীব চর ও নদীর বালুর চর পর্যন্ত।
বাদলদের বাড়ীর কাছে আজিমদের আখের জমি ছিল। আজিম একদিন জমি দেখতে গেছে,বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি মাথায় ঝোঙগোর দিয়ে জমিতে হাঁটতে হাঁটতে পথ হারিয়ে ফেলে । সন্ধ্যার আগে আগে ভিজা শরীরে বাড়ী ফিরে ঝোঙগোর না নিয়ে। বাড়ীর মানুষ জিজ্ঞাসা করে তোর ঝোঙগোর কই ? আজিম বলে আল্লাহরে দিয়ে দিয়েছি, আল্লাহর তো ঝোঙগোর নাই তাই!বাদলের আবার ভূতের ভয় বেশী ছিল। বাজার থেকে বাদলের বাড়ীতে যাওয়ার পথে বিলালআমিন ভাইর বাড়ীর দক্ষিণে বিরাট কবরস্হান । বাতিন,এমদাদ,আজিম,বাদল ও আমি নদীর পাড়ে বালিতে বসে আড্ডা মেরে সন্ধ্যা হয় হয় সময় চলে আসিতেছে সবাই। বাতিন আর আজিম বুদ্ধি বের করল আজ বাদলকে ভূতের ভয় দেখাবে। আজিম মনে হয় আগেই সাদা কাপড়ের ব্যবস্থা করে রেখেছিল আমি জানতামনা । কবর স্হানে বাঁশের ঝাড় থাকায় সন্ধ্যার সাথে কিছুটা অন্ধকার হয়ে আসে,বাদল ভয়ে ভয়ে ঐ জায়গাটা পার হইতেছে আর তখনই পুরাতন একটা কবরের উপর আজিম সাদা কাপড় বাঁশের সাথে বেধে লম্বা হয়ে দাড়িয়ে আছে। এই অবস্হা দেখে বাদল ভয়ে চিৎকার দিয়ে ফিট, পরে মাথায় পানি দিয়ে কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক অবস্থায় আসে।
আমি তখন বাড়ীতে ঠিকাদারি ব্যবসা মাত্র শুরু করেছি । নতুন হাইস্কুল হওয়াতে বেশ কিছু নতুন শিক্ষক যোগ দেয়,আমাদের সমবয়সি হওয়ায় সহজেই বন্ধুত্ব হয়ে যায়। দিলীপ বাবু,জালাল স্যার ও ধর্ম বিষয়ে শিক্ষক মান্নান স্যার। এলাকার আমি,এমদাদ ,মরম আলী,আজিম , সোবান(মারা গেছে আল্লাহ বেহেস্তে জায়গা দেন)ও সিদ্দিক। জালাল স্যার আবার খুবই রসিক ছিল,বিভিন্ন সময় কৌতুক বলে আড্ডা জমিয়ে রাখার ওস্তাদ। আমার আর এমদাদ আজিমের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকত,তবে কিছু সময়ের জন্য। আজিমের একটা প্রিয় খাবার ছিল তরকারির বাটির মধ্যে ঘি নিত এবং এর মধ্যে গরম মাত্র পাকানো হয়েছে গরুর বা খাসির মাংস ঢেলে দিত। এই খাবারটা খুবই মজার এবং ডায়াটবেটিস,কোলেষ্টরও উচচ রক্তচাপ কে আহ্বান জানানোর জন্য যথেষ্ট ।
যুক্তি ও তর্কে জালাল স্যারকে হারানো কষ্টসাধ্য,তাই মাঝে মাঝে বাকা পথ ধরতাম । এক দিন সিদ্ধান্ত নেই জালাল স্যারকে নিয়া মজা করব ।
তৎকালীন সময় আমাদের এলাকায় প্রচুর ফকির ছিল এটা সম্ভবত: শাহ আরপিন মোকামের প্রভাবে।গাজা সংগ্রহের দায়িত্ব দিলাম সামার উদ্দিন কে এবং সেই সিগারেটের ভিতর সুন্দর করে ঢুকিয়ে পাঁচ/ ছয়টা স্টিক বানায় ।
ঐদিন সন্ধ্যায় চাঁদের আলোতে প্রাইমারি স্কুলের সিড়িতে আড্ডা চলছে। একটু পরে আসে দিলীপবাবু,জালাল স্যার ও এমদাদ । জালাল স্যার সিগারেট টানত,তাই জালাল স্যারকে সিগারেট দেই,কিছুক্ষণ পরে টেনে বলে সিগারেট ডেম ডেম লাগে,বললাম তেমন কিছুনা,আরেকটা ধরান ।কিছুক্ষণ পর সাহিদাবাদ থেকে আসে মরম আলী। সামার উদ্দিনকে বলি সিগারেট ধরিয়ে মরম আলীকে একটা দে। সিগারেট কয়েকটা টান দিয়ে বলে সিগারেট বেশী ভাল না । মরম আলী ঐ সময় গাছ কিনে ছাতক পেপার মিলে পাটায় জম জমাট ব্যবসা । আমরা বললাম আগামী কাল গাছ দিব টাকা লাগবে। পকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে দিয়ে দেয় উদারতার সাথে। ঐ দিন মরম আলী বাজারে না গিয়ে বাড়ী চলে যায় ভাল লাগছে না বলে । এদিকে জালাল স্যার চলে যাবে,বললাম তাহলে চলে যান । জালাল স্যারের বাসা দক্ষিণে কিন্তু চলতে লাগল উত্তরে ক্যাম্পের দিকে। এমদাদ বল্ল কই যান,বলল বাসায় যাই । পরে এমদাদ বাসায় নিয়ে যায়। এখন সমস্যা মরম আলীর দুই হাজার টাকা। গাছতো নাই কি করি? সামার উদ্দিন বলল চিন্তা নাই কাল হবে একটা ব্যবস্হা। পরের দিন আমাদের পুরানবাড়ী থেকে দুই গাছ স্কুল ঘরের পিছন থেকে সাজনা গাছ(যা কলা গাছের মত নরম) কেটে তৈরি করে ওজনের জন্য । সন্ধ্যার পরে নদীর ঘাটে ওজন দিয়ে মরম আলীকে বুঝিয়ে দেয় ভোট মিয়া ও সামার উদ্দিন। ছাতক হতে দুই দিন পর আসে মরম আলী, কি খেয়ে দুই হাজার অগ্রীম দিলাম গাছ দিলে সাজনা। পরে এটা শেষ হল অন্য গাছ দিয়ে।মরম আলী আবার মাদ্রাসার ছাত্র ছিল হিন্দি,উর্দুগারো ও খাসিয়া ভাষা জানে। মর্ম আলীর বিখ্যাত বাংলা ঘর ছিল, আমাদের আড্ডার স্হান সাহিদাবাদে।১৯৮৮ সালের বন্যার ফলে মরম আলীদের পুরান বাড়ী বড় ঢালা হয়ে যায়।সাহিদাবাদের পিছনে ছোট নদীর মত আছে,যা কান্চন খালী নামে পরিচিত ছিল । ঐ এখানেও এখন গ্রাম হয়ে গেছে।
ক্রমশ———,
কমেন্ট করুন